বিশেষ প্রতিনিধি
‘কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছিল আয়মনকে খুুঁজে বের করতে। সিলেট থেকে এই শিল্পীকে বের করতে কয়েক মাস কেটে যায়। কয়েক’শ শিশু শিল্পীর অভিনয় দেখেছি; কিন্তু খুঁজে পায়নি আয়মনকে। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলেও তৈরি করতে সময় লেগেছে অনেক। আয়মন এখন দেশে বিদেশে ব্যাপক পরিচিত।‘
আয়মন সর্ট ফিল্মের পরিচালক ও নাট্যকার রহমান মনি আয়মনকে খুঁজে বের করার রোমাঞ্চকর গল্প তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কার প্রাপ্ত আয়মনের প্রধান চরিত্র আয়মন। এই আয়মন সম্পর্কে রহমান মনি তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন খোলাখুলিভাবে।
রহমান মনির ভাষায় আয়মন সর্ট ফিল্ম তৈরি করতে কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেন। সর্ট ফিল্ম গবেষণাধর্মী হওয়ায় রাতের পর রাত তাকে কাজ করতে হয়েছে। আয়মন নাট্যরূপ সাজিয়ে তোলার পর শুরু হয় প্রধান চরিত্রের আয়মনকে খোঁজার। প্রধান চরিত্রের শিল্পীকে হতে হবে শিশু। এই শিশু শিল্পীকে খুঁজে বের করতে রহমান মনি সিলেটের প্রায় সবকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের দ্বারস্থ হন। শতশত শিশু শিল্পীর অভিনয় পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু কোথায়ও খুঁজে পাচ্ছিলেন না আয়মনকে। হতাশ হয়ে পড়েন রহমান মনি। হাল ছাড়তে নারাজ। সিলেটের শিশু শিল্পী দিয়েই তিনি আয়মন করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন।
আয়মনের সন্ধান করতে রহমান মনিকে নতুন ঠিকানার সন্ধান দিলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ মিশফাক আহমদ মিশু। নতুন ঠিকানা রহমান মনির বাসার পাশেই। মুক্তাক্ষরের পরিচালক বিমল করের সাথে যোগাযোগ করলেন। বিমল কর প্রস্তাব দিলেন পরবর্তী শুক্রবারে মুক্তাক্ষরে যাওয়ার জন্য। রহমান মনি নির্ধারিত দিনে মুক্তাক্ষরে গেলেন। বেশ কয়েকজন শিশু শিল্পী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
বিমল কর জানালেন তাদের পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন রহমান মনি। বেশ কয়েকজন শিশু শিল্পীকে পর্যবেক্ষণ করলেন। কিন্তু পেলেন না আয়মনকে। মুক্তাক্ষরের পরিচালক বিমল কর বললে আরেকটা শিল্পী আছে। তার সাক্ষাত পেতে হলে পরবর্তী শুক্রবারে যোগাযোগ করতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রহমান মনি পরবর্তী শুক্রবারে আবার ছুটে যান মুক্তাক্ষরে। দেখতে পান কয়েকজন শিশু শিল্পীকে। পর্যবেক্ষণে তারা আনফিট। হতাশ রহমান মনির দিকে তাকিয়ে বিমল কর বললেন ৭ বছর বয়সের এক শিশু শিল্পী আছে। কিন্তু তাকে দেখতে অনেক ছোট দেখায়। আঙ্গুল ইশারায় ওই ছোট শিল্পীকে দেখিয়ে দিলেন বিমল কর।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে ওই শিশু শিল্পী। রহমান মনি ডাকলেন তাকে। কাছে এসে ওই শিশু শিল্পী অসাধারণ ভঙ্গিতে সালাম দিলেন। রহমান মনির মনে আশা জাগে। অভিনয় বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। ওই শিশু শিল্পীর ভেতরে আয়মনকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পান রহমান মনি। তবে তাকে পরিপূর্ণ আয়মন হিসেবে গড়ে তুলতে কিছুটা সময় লাগবে।
এই শিশু শিল্পী হলেন সামাইয়া সাঈদ স্মিতা। স্মিতাকে আয়মন হিসেবে কাস্ট করার আগে তার মা-বাবার সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্মিতার উপশহরের বাসায় গেলেন রহমান মনি ও তার সহকর্মীরা। সেখানে গিয়ে অবাক হলেন। স্মিতার পিতা এডভোকেট সাঈদ আহমদ। তিনি সিলেট জেলা ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট। নগরীর পরিচিতমুখ। স্মিতার মা ফাতেমা পারভিন।
আলোচনায় উঠে আসে স্মিতার প্রসঙ্গ। ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দৃশ্যের কথা শুনে সাঈদ আহমদ জানিয়ে দেন তার মেয়ে অভিনয় করবেন না। কিন্তু সাঈদ আহমদের স্ত্রী ফাতেমা পারভিন বেঁকে বসলেন। তিনি জানালেন তাদের মেয়ে অভিনয় করবেন। শেষ পর্যন্ত মা ফাতেমা পারভিনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলো।
স্মিতাকে আয়মন হিসেবে গড়ে তুলতে কয়েক সপ্তাহ রিহার্সসেল করাতে হবে। সিদ্ধান্ত হয় সাঈদ আহমদের বাসায় হবে ওই রিহার্সেল। স্মিতাকে আয়মন হিসেবে গড়ে তুলতে কয়েক সপ্তাহ রিহার্সসেল করানো হয়।
রিহার্সেল শেষে দিনক্ষণ ঠিক করে প্রথম স্যুটিংয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়। সিলেট নগরীর বালুচর এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় ওই স্যুটিং। স্যুটিংয়ের শুরুতেই রহমান মনিকে বিপাকে পড়তে হয়। আয়মনকে সেটে আনা যাচ্ছিল না। সঙ্গে থাকা আয়মনের মায়ের কাছ থেকে কারণ হিসেবে জানা যায় অনেক লোকজন দেখে স্মিতা ভড়কে গেছে। লোকজন কমিয়ে দিয়ে স্যুটিং সেটে আনা হয় আয়মনকে। প্রথম দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে ঘাম ঝরছিল। কিন্তু হঠাত সেট ছেড়ে চলে যায় আয়মন।
এবার কী সমস্যা হলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেল একটি কুকুর। কুকুরটি স্যুটিং সেটের পাশে অবস্থান করছিল। কুকুরটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। স্যুটিং সেটে ফিরে আসে আয়মন। আবার নতুন করে সমস্যা দেখা দেয়। এক কোণায় দাড়িয়ে আয়মনের বড় ভাই ভেঙচি কাটছিল। আয়মনের বড় ভাইও শিশু। তাকেও সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত প্রথম দৃশ্য ধারণে সক্ষম হন রহমান মনি।
কয়েক মাসের স্যুটিং শেষে তৈরি হয় আয়মন। আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কার লাভ করে আয়মন। আয়মন চরিত্রে স্মিতা যে অভিনয় দেখিয়ে গেছেন তা বলতে গেলে অসাধারণ। ওই অভিনয়কে বলা যায় একজন জাত শিল্পীর অভিনয়