সিলেটের আলো রিপোর্ট : সম্প্রতি সিলেট থেকে ছেড়ে আসা বিরতিহীন একটি যাত্রীবাহী বাস সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের নোয়াগ্রাম এলাকায় আসা মাত্র উল্টে খাদে পড়ে যায়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও অন্তত ১৫/১৬জন যাত্রী আহত হন। পরে কানাইঘাট থানাপুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে। এভাবে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে।
সিলেট শহর থেকে জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ। জেলা শহর থেকে জকিগঞ্জের দূরত্ব ৯১ কিলোমিটার। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। যানবাহন চলে ঝুঁকি নিয়ে। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে বেশি, বেড়েছে যাত্রী ও চালকদের কষ্ট। ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনেরও। ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। কবে এ সড়কে কাজ শুরু হবে তার ঠিক করে কেউ বলতে পারছেন না। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সড়কে সৃষ্ট শত শত গর্ত ভরাট না করা হলে এ সড়কটি নড়কে পরিণত হবার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সিলেট-জকিগঞ্জ প্রধান সড়কটি মারাত্মক বিধ্বস্ত হবার কারণে ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট গাড়িসহ অনেক যানবাহন এখন শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কে যাতায়াত করে। শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে এ সড়কটি এখন অনেক স্থানেই ভেঙে গেছে। শুধু তাই নয়; আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়কটিও এর ফলে বিধ্বস্ত হচ্ছে।
সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জÑএই চার উপজেলার মানুষ যাতায়াত করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের পুরো অংশই কমবেশি ভাঙা রয়েছে। পিচ ওঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে স্থানে স্থানে। বৃষ্টিতে কাদা হয়, রোদে ধুলা উড়ে। বিশেষ করে শাহবাগ থেকে আটগ্রাম-কালীগঞ্জ-জকিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এ সড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুই কন্যা শিশুসহ ছয়জন নিহত হন।
এ সড়কের করুণ দশা দেখে বুঝার উপায় নেই যে জকিগঞ্জবাসীর বড় এ সমস্যাটি দেখার মতো কোনো অভিভাবক আছেন। এ সড়ক সংস্কারের দাবিতে সিলেট সড়ক পরিবহণ সমিতি গত বছরের ২৬ জুলাই পরিবহণ ধর্মঘট পালন করেছে। এ বছরের মে মাসে একটানা ১৪ দিন ঐ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেও কোনো ফল পায়নি বাস মালিক পক্ষ। জেলা সমন্বয় সভায় এ বিধ্বস্ত সড়ক নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। জকিগঞ্জ উন্নয়ন সমিতি সিলেট এ সড়কটি সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে। কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না । সড়ক ও জনপথ বিভাগের আশ্বাসেই সšুÍষ্ট থাকতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
বাস চালক বদরুল আলম বলেন, ‘মনে হয় এই বুঝি গাড়ি উল্টাইয়া গেল। ঝুকিঁ নিয়াই গাড়ি চালাই। এ সড়কে গাড়ি চালাইতে সময়, তেল ও যন্ত্রপাতি নষ্ট এবং যাত্রীদের কষ্ট হয়’।
বাসযাত্রী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের কারণেই রাস্তাটি ঘনঘন নষ্ট হয়। দ্রুত রাস্তা নষ্ট হলে ইঞ্জিনিয়ার, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদার আবার কাজ পান।
জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পরে কখনো গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি এভাবে বিধ্বস্ত হয়নি। সঠিক নেতৃত্ব ও যোগ্য প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আমরা আরো কত কষ্ট করব তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম আহমদ বলেন, এ সড়ক নিয়ে তাঁরা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের গালমন্দ শুনছেন। প্রায় দুবছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা। সওজ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জ্যোতিষ ঘোষ জনদূর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বড় কোনো বরাদ্দ না থাকায় আমরা দীর্ঘদিন থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক পুরোটা সংস্কার করতে পারছি না। তবে ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চারখাই থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। এছাড়া জকিগঞ্জের বাবুর বাজার ও থানাবাজার এলাকায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আওতায় সংস্কার কাজ চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এ সড়কে ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা হিসেব পাঠিয়েছি, তা অনুমোদন হলে আশা করছি শীঘ্রই দরপত্র আহবান করে ঠিকানাদার নিয়োগের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের দিকে কাজ শুরু করতে পারব।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবীর বলেন, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কটি একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর আšÍিরক প্রচেষ্টায় সারা দেশের ন্যায় সিলেটে সড়ক সংস্কারের জন্য পাঁচশ কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৭৩ কোটি টাকা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই তা দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু হবে। মানসম্মত কাজ করানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করানো উচিত হবে বলে তিনি মনে করেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ ও জকিগঞ্জ-কানাইঘাট আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কটি সংস্কারের জন্য আমি একাধিকবার সংসদে দাবি উত্থাপন করেছি। সরাসরি ও লিখিতভাবে যোগাযোগমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। আমি তাতে আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে কিছু কিছু জায়গায় ধীরগতিতে সংস্কার কাজ চলছে। একনেকে অনুমোদিত বরাদ্ধের মাধ্যমে চলতি বছরে কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নিয়ে তিনি সড়কমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে কথা বলেছেন। প্রায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এটি করতে পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সড়টি মেরামতের প্রয়োজন হবে না।