স্টাফ রিপোর্টার,
বিভিন্ন জটিলতায় ‘‘ফাইল ওয়ার্ক” বিলম্বিত হওয়ার কারনে জগন্নাথপুর উপজেলা ছাড়া সুনামগঞ্জের কোথাও হাওররক্ষা ভেড়ীবাঁধের কাজ আজোও শুরু হয় নি। শনিবার জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওররক্ষা ভেড়িবাঁধের কাজ শুরু’র মধ্য দিয়ে এই উপজেলায় বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান । সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপেজলার হাওর রক্ষা ভেড়িবাঁধের স্কীম প্রস্তুুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত উপজেলা কমিটির আহ্বায়কদের কেউ বলেছেন‘ছাড়ের অর্থ কমিটির হিসাবে জমা হয় নি,এমনকি কাজের মূল্য নির্ধারণ হয়নি, আবার অনেকে বলেছেন, সার্ভে সম্পন্ন না হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সরকার কর্তৃক ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে সুনামগঞ্জের হাওররক্ষা ভেড়ীবাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানাবিধ জটিলতায় ভেড়ীবাঁধের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের ৪৮ টি বৃহৎ হাওর, কুশিয়ারা নদীর বাম ও ডান তীর, চলতি নদীর বাম ও ডান তীর এবং খাসিয়ামারা নদীর ডান ও বাম তীরে ভেড়ীবাঁধের কাজের জন্য এবার উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাত মিলিয়ে সর্বমোট বরাদ্দ হয়েছে ১০০ কোটি ৬ লাখ টাকা। বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের সর্বশেষ চিঠি এসেছে বিগত শুক্রবার(৫জানুয়ারি) সন্ধ্যায়। শনিবার(৬জানুয়ারি) দুপুরে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে ভেড়ীবাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএএ মান্নান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গুরালি, শনির ও পুটিয়া হাওরে, তাহিরপুরের শনির হাওরের উত্তরাংশ, মাটিয়ানের বর্ধিতাংশ এবং যাদুকাটা নদীর ডান পাড়ে, ধর্মপাশার সোনামড়লের পূর্বদিকে, ঘোড়াডোবার দক্ষিণাংশে, কাইলানির উত্তর-পূর্বাংশে, টঙ্গীর বাঁধে, জামালগঞ্জের হালির হাওর ও পাগনার হাওরে, দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর, বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ, টাংনি ও হুরামন্দির হাওরে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জামখলা,
সাংহাইর ও খাই হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে, দোয়ারাবাজারের নাইন্দার হাওর ও দেখার হাওর, সদর উপজেলার দেখার হাওর, করচার হাওর, কাংলার হাওর, জোয়ালভাঙা, ডাকুয়া, ও শিইল্লার হাওরের পানি ইতোমধ্যে নেমে গেছে। ওইসব হাওরে এখনই হাওররক্ষা ভেড়ীবাঁধের কাজ শুরু করা সম্ভব।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করা।
অথচ রবিবার পর্যন্ত কেবল জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরক্ষা ভেড়ীবাঁধ ছাড়া আর কোথাও কাজ শুরু হয়নি। ১৫ ডিসেম্বর থেকে একেক সময় একেক ধরণের জটিলতায় হাওররক্ষা ভেড়ীবাঁধের ‘ফাইল ওয়ার্ক’ বিলম্বিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইস) গঠন, প্রকল্পের অনুমোদন, হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়া, ভেড়ীবাঁধের অর্থ ছাড়ে বিলম্বসহ নানাবিধ জটিলতায় কাজ বিলম্বিত হয়েছে।
ভেড়ীবাঁধ নির্মাণের স্কীম প্রস্তুুত ও বাস্তবায়ন কমিটি জামালগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম আল ইমরান বলেন,ভেড়ীবাঁধের কাজের মূল্য নির্ধারণ এখনো হয় নি, মূল্য নির্ধারণ করতে হবে, কাজের শুরুতেই পিআইসিকে ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে, এজন্য বরাদ্দের টাকা উপজেলা কমিটির হিসাবে আসতে হবে, শুক্রবার কেবল অর্থ ছাড়ের চিঠি এসেছে, আমরা আশা করছি সকল কাজ শেষে সোমবারের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।
ধর্মপাশা উপজেলা বাঁধ নির্মাণের স্কীম প্রস্তুত ও বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুন খন্দকার বলেন, উপজেলার সকল হাওরের সার্ভে এখনো সম্পন্ন হয়নি। জয়ধুনা, ধানকুনিয়া ও খাইলানি হাওরের সার্ভে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার চিন্তা করছি আমরা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন,আমরা দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি, মূল্য নির্ধারণ না হলেও কাজ শুরু করা সম্ভব, সার্ভে সম্পন্ন হবার পর কাজ শুরু করলেও সমস্যা নেই। কাজ শেষে চূড়ান্ত প্রাক্কলন প্রস্তুুত করা যাবে। জগন্নাথপুরেও সেভাবে করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ ছাড় যেহেতু মন্ত্রণালয় করেছে, সেহেতু ১-২ দিন বিলম্ব হলেও উপজেলা কমিটির হিসাবে অর্থ যাবে, এ কারণেও কাজ বিলম্বিত করার কিছু নাই।
Related