নিজস্ব প্রতিবেদক : র্যাম্প মডেল থেকে জেএমবির ‘বিগ্রেড আদ-দার-ই কুতনীর’ কমান্ডার হওয়া ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় মেহেদী হাসানকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। তবে ইমাম মেহেদী হাসানের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, ইমাম মেহেদী হাসান জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনীর কমান্ডার। তাকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম। মেহেদীর বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা ও বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, সম্প্রতি র্যাবের জঙ্গি অভিযানে বেশ কিছু জঙ্গি গ্রেফতার হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনী’ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে। এই ইমাম মেহেদীর নেতৃত্বে গ্রুপটি সংগঠিত হচ্ছে। তার নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য থাকতে পারে।
তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়ার আগে ইমাম মেহেদী হাসান ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের বাইয়্যাত প্রদান করেছেন। তাদের মধ্যে দুই জঙ্গি এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার মেহেদী হাসান এক সময়ের র্যাম্প মডেল থাকলেও এখন সে জেএমবির একজন প্রথম সারির নেতা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম মেহেদী হাসান স্বীকার করেছেন, তিনি ২০১৫ সাল থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। গুলশানে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর নিহত জঙ্গি নিবরাসসহ বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় জঙ্গির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। মেহেদী জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে কর্মীদের আনুগত্য পরীক্ষার জন্য কিছু অংশকে বাইয়্যাতের (শপথ) মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা তুহিন মাসুদ বলেন, গতবছর অক্টোবরে র্যাবের অভিযানের মধ্যে পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির তখনকার আমির সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। যিনি তামিম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে জেএমবির নতুন অংশটিকে সংগঠিত করেন। সারোয়ারের বাসায় পাওয়া আলামত থেকে এই সংগঠনের দুটি ‘সামরিক ব্রিগেড’ থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি জানান, এর মধ্যে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন হামলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আর তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ গোপনে কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘বদর স্কোয়াড’ দুর্বল হয়ে গেলে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে।
র্যাবের অধিনায়ক বলেন, জেএমবির সারোয়ার-তমিম গ্রুপের উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মেহেদীর যোগাযোগ ছিল। তার সঙ্গে বাংলাদেশি প্রবাসীদেরও যোগাযোগ ছিল। তার মাধ্যমে অনেক সময় জঙ্গিবাদের অর্থ এসেছে বলে জানতে পেরেছি।
তিনি জানান, ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করা মেহেদীর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত এএসআই।