নিজস্ব প্রতিবেদক : সুশাসনের অভাবে মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সারাদেশে এখন অস্তিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, খাদ্য সংকট, প্রশাসনিক দূর্বলতা, আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতি, বিচার বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলানায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসব কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশ। অথচ শুক্রবার মাত্র তিন টাকার ডিম কেনার জন্য রাজধানীতে যা ঘটলো তা দেখে কি মনে হয় দেশ আসলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হয়েছে?। বিএনপি মাত্র দশ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে। এর মধ্যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জণগণের ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি এখনও বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল। বিএনপি আগামীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ এরশাদ করে বলেন, তোমরা আমার নয় বছরের শাসনামলের উন্নয়ন কর্মকান্ড জণগণের কাছে তুলে ধরো না। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনাররা সেই আমরা কর্মকান্ডের যে প্রশংসা করেছেন তাতে আমি অভিভুত হয়েছি। তারা সরকারী উচ্চ পদে থেকেও আমার প্রসংশা করেছেন।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, মিয়ানমারে সেনা প্রধান বলেছেন রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গেছে, তারা বাঙ্গালী। সেনা প্রধানের এই বক্তব্যে পর মনে হয় না রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো যাবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে এরশাদ বলেন, আপনি যতই কুটনেতিক তত্পরতা চালান না কেন, মনে হয় না তারা আর ফিরে যেতে পারবে বা মিয়ানমার ফেরত নেবে। তাই আমি অনুরোধ করবে তাদের কে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি জাতীয় পার্টির সাহায্য প্রয়োজন হয়, আমরা সাধ্যমত সাহায্য করবো।
এরশাদ সারাদেশ থেকে আগত দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। কিন্তু তোমরা মনে রেখো ক্ষমতা কেউ হাত তুলে দেয় না। ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয় । এজন্য দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে।
এসময় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগ রওশন এরশাদ বলেন, ক্ষতায় যেতে হলে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকন্ড তুলে ধরতে হওব। বঙ্গবন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।
বিশেষ আলোচকের বক্তব্য জাপার-কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, যারা দল থেকে বিশ্বাস ঘাতকতা করে চলে গেছেন তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবার অনেক পরিক্ষিত কর্মীও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনে বিজয় হতে হলে আমাদের কর্মসূচী হতে হবে বাস্তবধর্মী ও কল্যাণমুখী । মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সংবিধান অনুয়ায়ী যে নির্বাচন হতে তাতে অংশ গ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অবাধ ও সুষ্ট নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীতে স্ট্যাকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রাখতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে হলে এখন থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্র কমিটি গঠন করতে হবে। ভোট কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখতে শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরী করতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মান্নান, ইললামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, বিএনএ জোটের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, শেখ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভ রায়, এটিইউ তাজ রহমান, মেজর অব. খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল নুরুর ছাফা সরকার ও এ কে এম আসরাফুজ্জামান খান, শফিকুল ইসলাম মধু, ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, মহসিন উল হাবলু, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। সভা পরিচালনা করেন দলেল যুগ্ন মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন, সোলেয়মান আলম শেঠ, রত্না আমিন হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এম হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, আবুল কাশেস, এম এ মান্নান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসহাক ভূইয়া, কাজী মামুনুর রশিদ, নাজমা আক্তার, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান।
যৌথসভা হলেও নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে জনসভায় রূপ নেয় ইঞ্জিনির্য়াস ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই সারাদেশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, যুব সংহতি, ছাত্র সমাজের খন্ড থন্ড মিছিল ঝড়ো হয় রমনা এলাকায়। সকাল সাড়ে দশ টার দিকে ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর কদমতলি থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ ও ইব্রাহিম মোল্লার নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী একটি বিরাট মিছিল রমনা পার্কের সামনে পৌঁছালে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই সময় পুরো সড়কে তীব্র যানজট লেগে যায়। এর পর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শকিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্বে ও বিশাল মিছিল সহকারের নেতাকর্মীরা যৌথ সভায় অংশ নেন।