এ রউফ,পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের রাজারপাট ডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা মানুষেরা দীর্ঘদিন খেকে অতি কষ্টে দিনযাপন করছে।পঞ্চগড় মহাসড়ক থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দুরে রাজারপাট ডাঙ্গা আশ্রায়ন প্রকল্প । পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে খুব বেশী দুর না হলেও অনেকটা নির্বাসিত জীবন পার করছে এই গুচ্ছ গ্রামের প্রায় সাড়ে আট’শ মানুষ । চলাচলের রাস্তাঘাট নেই বললে চলে এবং লোকালয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। আধুনিক সুযোগ সুবিধার কোন সংবাদই পৌছেনা তাদের কাছে । বন্দী জীবনের মতোই তাদের এক প্রকার বসবাস।
২০০১ সালে ভূমিহীন ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবংএক’শ ২০ জন ভূমিহীন দরিদ্র মানুষকে সাড়ে পাঁচশতক করে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি বরাদ্দ দেয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে রাজারপাট ডাঙ্গায় এই গুচ্ছগ্রাম। এরমধ্যে আড়াই শতক জমির উপর সরকারি খরচে একেকটি পরিবারের জন্য একটি করে কক্ষ নির্মাণ করে দেয়া হয়। দুইটি কমিউনিটি সেন্টার, প্রতি দশ পরিবারের জন্য একটি করে টিউবওয়েল, পাঁচ পরিবারের জন্য একটি পাঁকা ল্যাট্রিন বরাদ্দ দেয়া হয। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি নানা সুযোগ সুবিধা পেলেও রাস্তা ঘাট না থাকার কারণে তাদের জীবন যাত্রায় কোন অগ্রগতি সাধিত এখন পর্যন্ত হয়নি। অসহায় ভূমিহীনদের মাথা গোজাবার ঠাই হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে প্রায় ১৭ বছর ধরে অন্ধকার মহলেই কেটেছে তাদের জীবন। রাস্তা এবং ব্রীজ নির্মাণের দাবি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও শুধু আশ্বাসই মিলেছে ।
গুচ্ছ গ্রামটির পশ্চিম ও দক্ষিণে করোতোয়া নদীএবং পূর্ব দিকে চাওয়াই নদী প্রবাহিত হয়েছে । উত্তরপ্রান্তে একটি সরু আলের মতো রাস্তা থাকলেও সেটি ব্যাক্তি মালিকানাধিন। তাই চলাচলে প্রতিদিন বাধা প্রয়োগ করে জমির মালিকেরা । এদিকে তিন পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে ব্রীজ, রাস্তা ঘাট না থাকার কারণে শুষ্ক মৌসুমে হাটু পানি ভেঙ্গে পার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে নদী পার হওয়ার কোন উপায় থাকেনা আশ্রয়ন প্রকল্পের দিনমজুর ও শিক্ষার্থীদের। ফলে স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের জন্য নদী পেরিয়ে পড়া লেখা চালানো যেমন কষ্টকর হয়ে পড়েছে তেমনি চিকিৎসা সেবা পাওয়াও এখানে একেবারে দুস্কর । ছোট ছোট স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্খীরা কোন কোন সময় বাবা মায়ের ঘারে চেপে নদী পার হতে হয় । কেউ কেউ নদী পার হয়ে কাপড় পাল্টে স্কুল কলেজে যায়। এই গুচ্ছ গ্রামের নারী পুরুষ সকলেই খেটে খাওয়া শ্রমিক । রাস্তাঘাট এবং ব্রীজ না থাকায় সময় মতো কাজে যেতে পারেনা তারা।
ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা বসিরউদ্দিন জানান, আমরা এই গ্রামের সবাই শ্রমিক । কাজ করে খাই । শুকনা মৌসুমে হাটু পানি নদী পার হয়ে কাজে যেতে পারলেও বর্ষা কালে যাওয়া সম্ভব হয়না। সময় মতো কাজে যেতে পারিনা বলে মহাজনেরা কাজে নেয়না।কাজে না যাওয়া মানে এই সময় না খেয়ে আধা পেটে দিন পার করতে হয়।
খোতেজা বেগম (৪০) তিন মেয়ে আর জামাই কে নিয়ে বরাদ্দকৃত একটি ঘরে থাকেন। স্বামী সহ সবাই কাজ করেন। চার কিলোমিটার দুরের একটি স্কুলে দুই মেয়ে পড়াশোনা করছে । তিনি জানান, হামার খুব কষ্টভাই। এলা মোর কামও নাই । দিনে তিনবার মেয়ে গুলাক কলাত করে নদী পার করে দিবা হচে। কষ্ট করে ছুয়ালা স্কুল যাছে । কাজত যাম কেংকরে । রাজারপাট ডাঙা আশ্রায়ন প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি লোকমান আলী তিনি জানান, বহু অফিসত দরখাস্ত দিছি । কাম হয়নি ।
অবহেলিত এই আশ্রায়ন প্রকল্পে থাকা জনদুর্ভোগের মানুষের দাবি সবার আগে চাওযাই নদীর উপর একটি ব্রীজ এবং একটি রাস্তা নির্মাণ। এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ওয়াদুদ বলেন, রাজারপাট ডাঙ্গা আশ্রায়ন প্রকল্পটি একটি দ্বিপের মতো। তিন পাশে নদী। অন্য পাশে মালিকানা জমি। ফলে এখানে ব্রীজ এবং রাস্তা নির্মাণের বিকল্প নেই। সম্প্রতি আমি সরেজমিনে গিয়েছি । এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।