January 22, 2025, 11:06 pm

বিজ্ঞপ্তি :::
Welcome To Our Website...
শিরোনাম ::
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের অভিনন্দন আকাশ চৌধুরী সম্পাদিত ‘বিজয় চিরন্তন’বেরিয়েছে ওসমানী হাসপাতালের নার্স আছমা আলহারামাইন থেকে বহিস্কার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবে ব্যারিষ্টার এম এ সালামের মতবিনিময় সুনামগঞ্জের গামাইরতলা সীমান্তে ভুয়া পুলিশ সহযোগী সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাঁচাতে জনগনের কাছে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিতে হবে: সিলেটে তথ্য সচিব সিলেটের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক শামীম “”বিদায় বেলায় ফুলেল শুভেচ্ছা সংবর্ধনা আর ভালোবাসা সিক্ত যিনি সাংবাদিক চঞ্চল মাহমুদ ফুললের সুস্থতা কামনায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক পুরস্কার পেলেন দক্ষ সংগঠক ও অভিনয়শিল্পী কামাল জৈন্তাপুরে বিভিন্ন কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়
বছরের পর বছর-ই অশান্ত থাকে দক্ষিণ ছাতক হত্যা মামলায় ফেঁসে গেছেন জাউয়াবাজারের চাচা-ভাতিজা

বছরের পর বছর-ই অশান্ত থাকে দক্ষিণ ছাতক হত্যা মামলায় ফেঁসে গেছেন জাউয়াবাজারের চাচা-ভাতিজা

বছরের পর বছর-ই অশান্ত থাকে দক্ষিণ ছাতক
হত্যা মামলায় ফেঁসে গেছেন জাউয়াবাজারের চাচা-ভাতিজা
বাহিনীর দুই কর্ণধার রেজা তালুকদার ও হীরক তালুকদার
সংবাদদাতাঃ পতিত সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার শান্ত ও সুনিবিড় জাউয়াবাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন কথিত আ’লীগ নেতা রেজা মিয়া তালুকদার এবং তার ভাতিজা হিরক মিয়া তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত চাচা-ভাতিজা বাহিনী। হেন অপকর্ম নেই যা তারা করেননি। অর্থের বিনিময়ে অন্যের দোকানকোটা বা বাড়ি-জমি জবরদখল, ঘর নির্মাণ বা দোকানকোটা নির্মাণকারীদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা দাবি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র সমান্তরাল বেআইনী সংস্থা গঠন করে দক্ষিণ ছাতক এলাকায় হাইকোর্ট নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও টমটমবা ইজিবাইকের রুট পারমিট প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, সালিশ-বিচারের নামে সাধারণ ও নিরিহ মানুষকে হয়রাণী বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে জবরদস্তিমুলক অর্থ আদায়, ইত্যকার নানা অভিযোগ ছিল এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। চাচা-ভাতিজা বাহিনীর অব্যাহত অন্যায় জুলুম-নির্যাতনে অতীষ্ঠ ছিল জাউয়াবাজার এবং আশেপাশের ৫/৬টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।

শুধু এলাকাবাসী-ই নয়, এ চক্রের হাত থেকে রেহাই পায়নি নিকটাত্মীয়রাও। বহুতল ভবন নির্মাণকালে চাচাতো ভাই মুক্তার মিয়া তালুকদারের কাছেও চাঁদা দাবি করেন হিরক মিয়া তালুকদার। এ ঘটনায় বিক্ষুব্দ মুক্তার তালুকদার বাদী হয়ে হিরকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন (মামলা নং-২৮, জিআর মামলা নং-২৯৯/১১)। এছাড়া বাহিনীর প্রধান রেজা মিয়াসহ প্রায় সকল সদস্যের বিরুদ্ধে ছাতক থানাসহ সিলেট-সুনামগঞ্জের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যে কিছু মামলা আদালতে শুনানী চলছে। আর কয়েকটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান।

কিন্তু এবার আর পার পেলো না চাচা-ভাতিজা বাহিনী। বিগত জুলাই-আগস্টে দেশে সংঘটিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বোমাবাজি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ইত্যাদি অপকর্মে ‘ভাড়া খাটতে গিয়ে’ মামলায় ফেঁসে গেছেন চাচা-ভাতিজা বাহিনীর প্রধান রেজা তালুকদার, সেকেন্ড ইন কমান্ড হিরক তালুকদার, গোলাম মুক্তাদিরসহ অন্যরা। এবার কিন্তু সুনামগঞ্জ বা সিলেট নয়। তাদের বিরুদ্ধে খোদ রাজধানী ঢাকা তথা ডিএমপি’র এক থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় রুজু করা হয়েছে। জনৈক সবুজ আলীর যুবক ছেলে রিক্সাচালক মোঃ আরিফ (২৮) কে গুলি করে হত্যার দায়ে নিহতের মাতা সূর্য্যবানু বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় চাচা-ভাতিজা বাহিনীর বেশ কয়েকজনকেই আসামী করা হয়েছে। হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে। আর সরকার পরিবর্তন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাচা-ভাতিজা বাহিনীর সদস্যরা। এবার আর রক্ষা পাচ্ছেন না দেখে তারা আত্মগোপনে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চাচা-ভাতিজা বাহিনীর অর্থদাতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবির আহমদ হলেও এদের অস্ত্র সরবরাহ করেন জাউয়া কোনাপাড়া গ্রামের আসদ আলীর ছেলে ছয়ফুল। ছয়ফুল সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার, পুলিশের তালিকাভূক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলাও রয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধ করতে অস্ত্রসহ নিজেরা ভাড়া খাটতে গিয়ে ঢাকাসহ সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই বাহিনীর রেজা-হিরক-গোলাম মুক্তাদিরসহ অন্যরাও মামলার আসামি হয়েছেন।

এখানেই কিন্তু শেষ নয়। গত ১৬ অক্টোবর নিজ থানা ছাতকে এই বাহিনীর প্রধানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা। ছাতক থানার জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ আব্দুস সালাম বাদী হয়ে এটি দায়ের করেছেন (মামলা নং-১০/২৪)। এতোগুলো মামলার মুখোমুখি হয়ে দিশেহারা বাহিনীর সদস্যরা। ইদানিং আর তাদের জাউয়াবাজার এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে জনমনে কিন্তু স্বস্তি নেই। জাউয়াবাজারসহ সংলগ্ন ইউনিয়নের জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে আতংক। কখন জানি চাচা-ভাতিজা বাহিনী আবারও হামলা চালায় নিরীহ মানুষের উপর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পতিত আ’লীগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকতে উপরোক্ত রেজা মিয়া নিজেকে জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি দাবি করতেন। বাস্তবে এর সত্যতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আর পুরোনো দাপট দেখাতে গিয়ে রেজা-হিরক-মুক্তাদিররা ফেঁসে গেছেন পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায়।

মামলা সুত্রে জানা যায়, ছাতকের সিংচাপইড় ইউনিয়নে গত ১৫ অক্টোবর ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম এক আসামী গ্রেফতার করেন। খবর পেয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন এবং রেজা ও হিরকের নেতৃত্বে তাদের বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ধৃত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ছাতক থানায় পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলার আইও এসআই আব্দুস ছাত্তার এ প্রতিনিধিকে জানান, পুলিশ এ্যাসল্টে জড়িত থাকার দায়ে এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ ছাতক এলাকা হাইকোর্ট নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও টমটমবা ইজিবাইকের রুট চলাচলে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। এ কারণে পুরো বাহিনী নিয়ে এসে প্রকাশ্যে জনসম্মক্ষে পুলিশ সার্জেন্ট হামিদুরকে অপদস্থ ও নাজেহাল করেন রেজা মিয়া তালুকদার। এ নিয়েও মামলা হয়েছিল বলে সুত্রটি জানিয়েছে। এ ঘটনার ব্যাপারে সে সময় জাতীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছিল।

স্থানীয় একটি সুত্র জানিয়েছে, এলাকায় অত্যন্ত সম্মানী এক দানশীল যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দোকানকোটা জবরদখল, লুটপাট, মারপিট, চাঁদা দাবির অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতে চলমান এক মামলায় রেজা মিয়াসহ তার সহযোগী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ওই প্রবাসীসহ বেশ কয়েকজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলাটি শেষপর্যায়ে রয়েছে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেভাবে মামলার গতি-প্রকৃতি এগুচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বিবাদীরা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।

বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে, চাচা-ভাতিজা বাহিনীর অন্যতম কুশীলব এবং অর্থদাতা প্রবাসী কবির আহমদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় ২০০৮ সালের ২ মার্চ দায়েরি এফআইআর নং-৩, জিআর মামলা নং-৫৩/০৮-এর মাধ্যমে ৩২৩/১৪৩/৩০৭/৩৮০/৪২৭ ধারায় মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র এয়ারপোর্ট থানায় ২০২৩ সালের ৪ মে দায়েরি এফআইআর নং-৮/২৩ (ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/
১১৪ বাংলাদেশ দন্ডবিধি) মামলায় তিনি অভিযুক্ত।

বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিরক মিয়া তালুকদারের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর দায়েরি এফআইআর নং-৭, জিআর মামলা নং-৩১৫/১১ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারায়, ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর দায়েরি এফআইআর নং-২৮, জিআর মামলা নং-২৯৯/১১ মামলায় ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৮৫/৫০৬ (২) ধারায় এবং ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দায়েরি এফআইআর নং-১০, জিআর মামলা নং-৩০৪/০৭-এ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৭৯ ধারায় মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র এয়ারপোর্ট থানায় ২০২৩ সালের ৪ মে দায়েরি এফআইআর নং-৮/২৩ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/১১৪ ধারায় রেকর্ডকৃত মামলায় তিনি আসামি।
এই বাহিনীর আরেক প্রভাবশালী সদস্য গোলাম মুক্তাদিরের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২০ মে দায়েরি এফআইআর নং-২৪/১২২, জিআর মামলা নং-১২২/১৭ মামলায় বিভিন্ন ধারায় মামলা চলমান রয়েছে।

এসব মামলায় ওদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি আছে অথবা কোন কোন মামলায় প্রাথমিক পর্যায়ে কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এতো কিছুর পরও কিন্তু এই চক্রটি থেমে নেই। একের পর এক তাদের দৌরাত্ম ও জবরদস্তি চালিয়ে যাচ্ছে।

জাউয়াবাজার এলাকা এবং এর আশেপাশের ইউনিয়নসমুহের বাসিন্দারা মনে করেন গডফাদার রেজা মিয়া তালুকদারের নেতৃত্বাধীন চাচা-ভাতিজা বাহিনীর অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে জনগণকে রক্ষা করতে প্রশাসনকে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু ওদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে, সেহেতু দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব নয়। আর তাই যদি হয়, তা হলেই হয়তো শান্ত ও সুনিবিড় জাউয়াবাজার ও সংলগ্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্বের অবসান হতে পারে।


Comments are closed.




© All rights reserved © sylheteralo24.com
sylheteralo24.com