মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : বাজারজাতকরণ, মূলধন ও নায্যমূল্য না পাওয়াতে বিলুপ্তির পথে এক সময়ে দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জিত মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ধূনিজুড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী নকশী শীতলপাটি। মুর্তা বেত দিয়ে তৈরী এই শীতলপাটির কদর ছিল সব জায়গায়। এক সময়ে সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে সব সরঞ্জামাদির সাথে একটি নকশী শীতল পাটি দেওয়া রেওয়াজ ছিল। কিন্তু বিলুপ্তি হওয়ার কারণে ওই রেওয়াজটি এখন আর নেই। নকশিগুলোর মধ্যে বেত দিয়ে মসজিদ, মন্দির, হাঁস, মুরীগ, পাখি, বিড়াল, বক ও হরিণসহ বিভিন্ন পশু-পাখির ছবি তৈরি করা হয়। এক সময় শীতল পাঠি তৈরী করে জিবিকা নির্বাহ করত ধূলিজুড়া গ্রামের প্রায় ১০০ পরিবার। এছাড়াও উপজেলার জুগিকোনা, সাদাপুর, বেড়কুড়ি, জাহিদপুর, মেদেনীমহল, মুনিয়ারপাড়, তুলাপুর ও আব্দুল্লাহপুর গ্রামের অনেক মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প বিলুপ্তির পথে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- এই শিল্পের সাথে এখন জড়িত আছেন মাত্র ৫ পরিবার। শীতলপাটির কারিগররা বলেন, একটি সাধারণ পাঠি বুনতে সময় লাগে ২০ দিন। পাটি বিক্রয় করতে হয় ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা এবং উন্নতমানের পাটি বুনতে সময় লাগে দেড়মাস। এটি বিক্রি করতে হয় ১৫-২০ হাজার টাকায়। মুর্তা ক্রয় করে পাটি বানাতে যে খরচ ও সময় ব্যয় হয় তাতে আমাদের পোষেনা। আমাদের অর্থনৈতিক স্বচ্চলতার অভাবে মূলধন বিনিয়োগ করতে পারিনা এবং ব্যাংক থেকে ঋণও পাইনি। যার কারণে আমরা এই পেশা ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বর্তমানে শ্রমিকের কাজ করছি।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের শীতল পাঠির জন্য বিখ্যাত হয়েছেন ধূলিজুড়া গ্রামের হরেন্দ্র দাশ। হরেন্দ্র দাশ শীতল পাঠি বুনতে বিখ্যাত হওয়ায় ২০১৩ সালে সরকারীভাবে প্রশিক্ষণে যান জাপান। শীতল পাঠির জন্য বিখ্যাত হরেন্দ্র দাশ বলেন, আমার পূর্ব পুরুষেরা এই পাঠি বুনে গেছেন তাই আমি ও বুনে থাকি। পরিশ্রম অনুযায়ী বাজারে উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় এ কাজে আগ্রহ কমে গেছে। পূর্ব পুরুষেরা করে গেছেন তাই আমি বাদ দিতে পারি না। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে তেমন চাহিদা নেই তবে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফরমাইশ আসে। এ অনুযায়ী পাঠি বুনে তাদের কাছে পাঠাই।
এ ব্যাপারে শিতলপাটি শিল্প পরিষদের সভাপতি বেনু ভূষণ দাশ বলেন, মূলধন ও প্রশিক্ষণের অভাবে আমারা এই শিল্পকে বিকশিত করতে পারছিনা। সরকারি উদ্যোগে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে এই শিল্প দেশের চাহিদা মিঠিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।