এদিকে দিল্লী সফররত জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে ভারতীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও সিনিয়র মন্ত্রীদের দফায় দফায় বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরশাদের এই সফরের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়া মেরকরুণের সৃষ্টি হতে পারে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সোমবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। বৈঠকে জাপার পক্ষে নেতৃত্বে পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সুনীল শুভ রায়, মেজর অব. খালেদ আখতার।
অপরদিকে সুষমা স্বারাজের সঙ্গে ভারতীয় পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাউথ ব্লকের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এই ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ও জাতীয় পার্টির নেতারা মুখ না খুললেও বিজেপি ও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ কাভার করেন এমন দুই জন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির চিন্তা ভাবনা কি, জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে তা জানতে চেয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা সুষমা স্বরাজ। এরশাদ সুষমাকে তার দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। পরে সুষমা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত সরকার জাতীয় পার্টির কাছে কি প্রত্যাশা করে সেই বিষয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পরিস্কার বার্তা দেন বলে দিল্লীর নির্ভরযোগ্য সূত্র আভাস দিয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে জাতীয় পার্টির মধ্যে পার্টি টু পার্টি সর্ম্পক সামনের দিনে আরো জোরদার করার ব্যাপারে এরশাদ- সুষমা আলাপ আলোচনা করেন।
এরআগে রবিবার বিকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্ব ভারতীয় বিজেপির সাবে সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনাথ সিংহের সরকারী বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকেও বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা না থাকার বিষয়ে সুষমা স্বরাজ ও রাজনাথ সিং এর সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তবে ভারত সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী ও একই সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির সিনিয়র দুই নেতার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সত্যিকার অর্থেই কি আলাপ আলোচনা হয়েছে, তা দেশে ফিরেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিস্কার করবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
এদিকে হঠাৎ করে সরকারী আমন্ত্রণে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভারত সফর ও সফরে গিয়ে ভারতের হাইপ্রোফাইল নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠকের দেশের রাজনৈতিক শিবিরে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এরশাদের এই সফরের দিকে তীক্ষণ নজর রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নয়া দিল্লীস্থ বাংলাদেশের দুতাবাসের কর্মকর্তারা এরশাদের সফর নজরদারীতে রেখেছেন। শুধু সরকারের পক্ষ থেকে নয়, বিএনপি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এরশাদের দিল্লী সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভুমিকা কি হবে, তা এই সফরের পর চূড়ান্ত করবেন এরশাদ। এমনটায় মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়া আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জোট মহাজোটের রাজনীতিতে এরশাদের এই সফর নয়া মেরুকরণের জন্ম দিতে পারে বলেন মনে করছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে এরশাদের দিল্লী সফর নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, যে কোনো কারণেই হোক স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে পরক্ষো বা প্রতোক্ষ্যভাবে ভারত সরকারের বেশ প্রভাব থাকে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জাপার শীর্ষ নেতাদের দিল্লী সফর আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে বেশ ইতিবাচক ভুমিকায় রাখবে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করার ঘোষণা দেন এরশাদ। এছাড়া বিগত নির্বাচনের আগেও এরশাদ দিল্লী সফর করেছিলেন। এবারও আগামী জাতী নির্বাচনের কয়েকমাস আগে সরকারী আমন্ত্রণে ভারত সফরের গিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে এরশাদের দফায় দফায় বৈঠক, আগামীতে বাংলাদেশের রাজনীতি বিশেষ করে জোট মহাজোটের হিসেবে নিকাশ কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে বেশ আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।
|