বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : বিশ্বনাথ উপজেলার অন্যতম প্রধান নদী খাজাঞ্চী। এককালের খড়স্রোতা নদী হলেও এখন সংকোচিত। নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি উত্তর বিশ্বনাথবাসির দীর্ঘদিনের। দিনের পর দিন ফেরিয়ে গেলেও নদীতে সেতু নির্মাণ হচ্ছে না। উপজেলার রামপাশা ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের সংযোগস্থল আশুগঞ্জবাজার এলাকায় প্রায় ১৫০ ফুট প্রস্থের নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসি।
সেতু নির্মাণ না হওয়ার ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকার ২০টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই পারাপার করতে হয়। এতে প্রতিনিয়তই ঘটে অনেক দুর্ঘটনা। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। আর সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি বাড়ত শিক্ষিতের হার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। রোগিদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর সাঁকোটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর তা এলাকাবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদান করা চাঁদা থেকে নির্মাণ করা হয়। সরকারি কোনো সহযোগিতা না থাকায় এলাকার গরিব জনসাধারণের জন্য তা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আর্থিক সংকটের কারণে তাই সাঁকো নির্মাণ করা হয় শুধু মাত্র সরু বাঁশ দিয়ে। তাতে বাঁশের ছাটাই দেয়া সম্ভব হয় না। ছাটাই না থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বিলপার, পূর্ব বিলপার, দরপার, কান্দিগ্রাম, বাবুনগর, মাওনপুর, নোয়াপাড়া, ভাটপাড়া, ভোলাগঞ্জ, খাজাঞ্চীগাঁও, কাবিলপুর, দোহাল, রামচন্দ্রপুর, পালেরচক, পাঁচঘরি, পাঠাকইন, শ্রীপুর, মনোহরপুর, আশুগঞ্জ বাজার, রাজাগঞ্জ বাজারসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন খাজাঞ্চী নদীর বাঁশের সাঁকো দিয়ে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার আশুগঞ্জ বাজারে হাটের দিন প্রায় দুই হাজার মানুষকে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়া ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে সাঁকো ব্যবহার করে আসতে হয় ‘আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হলি চাইল্ড কিন্টার গার্ডেনে’ যাতায়াত করতে হয়।
এলাকার রংমালা বিবি বলেন, নাতী-নাতনিরা একা একা সাঁকো পারাপারে ভয় পায় বলেই প্রতিদিন তাদের সঙ্গে পরিবারের বড় কাউকে আসতে হয়। আবার স্কুল ছুটির পর আবারও কাউকে এসে নিতে হয়।
আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামিমা বেগম ও হলি চাইল্ড কিন্টার গার্ডেনের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরোও বৃদ্ধি পাবে।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয়। শিক্ষার্থী ও রোগী পারাপারের ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
উপজেলার প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত বলেন, সেতু নির্মাণের প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হলে আমাদেরকে জানানো হবে।
স্থানীয় সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমে উপজেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হবে। এর জন্য প্রয়োজন সর্বমহলের সহযোগিতা।